অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানোর পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন সদ্য সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরদিন রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
টুইটারের বার্তায় ইমরান খান বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। কিন্তু শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে।
দেশটির রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এই চেয়ারম্যান বলেছেন, দেশের জনগণই সর্বদা তাদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করে। এদিকে, ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। এরপরই পিটিআই চেয়ারম্যান কথিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
ইমরান খান আজ বানি গালায় তার দল পিটিআই-এর কেন্দ্রীয় কোর এক্সিকিউটিভ কমিটির (সিইসি) একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে ভবিষ্যত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে যে, আমরা বিধানসভায় এই চোর এবং ডাকাতদের সঙ্গে বসতে পারি না। সবাই সর্বসম্মত সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আমরা জাতীয় পরিষদ থেকে গণপদত্যাগ করতে যাচ্ছি। আমাদের সকল সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবেন’।
বিরোধী দলকে ‘গুণ্ডা, ডাকাত ও লুটেরা’ আখ্যা দিয়ে ইমরান খানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ বলেছেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে সংসদে বসতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘আজ রাত ৯টায় একটি সভা হবে এবং আমি রাত সাড়ে ৯টায় জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেব’।
সমাজতান্ত্রিক, উদারপন্থী এবং বিপ্লবী ধর্মীয় দলের সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তানের যৌথ বিরোধী দল গত রাতে একটি নাটকীয় ভোটে ৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে ১৭৪ সদস্যের সমর্থনে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তা, মধ্যরাতে সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের পদত্যাগের পর অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইমরান খান।
পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের সভাপতিত্বে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। দিনভর চলে নাটকীয়তা। কয়েক দফায় অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারবেন না জানিয়ে রাতে পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার। পরে স্পিকারের আসনে বসেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সদস্য আয়াজ সাদিক। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভোটে হেরে যান ইমরান খান।
সুপ্রিম কোর্ট ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে যে রায় দিয়েছে তা চ্যালেঞ্জ করে একটি পর্যালোচনা পিটিশন দাখিল করেছে ইমরান খান সরকার। যদিও পিটিশনটি এখনও আদলাতে দাখিল করা হয়নি। সোমবার সেটি আদলাতে দাখিল করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জল্পনা ছিল, ইমরান হয়তো দেশ ছাড়তে পারেন। কিন্তু পাকিস্তানের কোনও সরকারি লোক যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, তার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। বলা হয়েছে, নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ বিদেশগামী বিমানে চড়তে পারবেন না। বিষয়টির দিকে নজর রাখতে গোয়েন্দা শাখার কর্মীদেরও সতর্ক করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
ধন্যবাদ